একটা জয় কেমন পাল্টে দিলো দেশটাকে! সব গুমোট অবস্থা, সব অস্থিরতা মুহূর্তে সরে গিয়ে সোমবার রাত থেকেই বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে এক মিছিলের দেশ; বিজয় মিছিল। ক্ষণে ক্ষণেই কানে আসছে, ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ স্লোগান। এর মধ্যেই একটা মিছিলে স্লোগান শোনা গেল, ‘এবার ট্রফি জিতবে কে? বাংলাদেশ ছাড়া আবার কে!’
হ্যাঁ, স্বপ্নের তো কোনো বাঁধা ধরা গন্ডি নেই। স্বপ্ন তাই ট্রফিতে পৌঁছে গেছে।
বাস্তবতা বলছে, ট্রফি না হোক, এখন বাংলাদেশ অন্তত সেমিফাইনালে পৌঁছে ইতিহাসের আরেকটা প্রাচীর ভাঙ্গার স্বপ্ন তো দেখতেই পারে। আর এই স্বপ্ন বুকে নিয়েই গতকাল মঙ্গলবার সকালে জাতীয় দল রওনা হয়ে গেছে নিউজিল্যান্ডে। স্বাগতিকদের বিপক্ষে খেলা হবে ১৩ মার্চ, হ্যামিলটনের সিডন পার্কে।
তবে বাংলাদেশের সামনে নিউজিল্যান্ড হলেও লক্ষ্যটা আসলে সেমিফাইনাল।
কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে এই সেমিফাইনালের স্বপ্নটা মূর্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের। সুনীল গাভাস্কার, সৌরভ গাঙ্গুলি থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় বিশ্লেষকই বলছেন, দিনটা অনকূলে থাকলে খুবই সম্ভব যে ইতিহাসের আরও একটা ধাপ পার হয়ে যাবে বাংলাদেশ।
দলের খেলোয়াড়রাও তেমনই আশা করছেন। বাংলাদেশকে কোয়ার্টার ফাইনালে তোলার নায়ক রুবেল হোসেন তো পরিষ্কার বলে দিলেন যে, কোয়ার্টার ফাইনালেও বিশ্বকে চমকে দিতে চান তারা। শুধু দেশের মানুষকে এই লড়াইয়ে আরও একবার সঙ্গে চাইলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে আমাদের সমর্থন করেন, সবসময় পাশে থাকেন; সেটা আমরা মাথায় রাখি। আশা করি দেশের মানুষ এই জয়ে খুব আনন্দ পেয়েছেন। সবাই আমাদের পাশে থাকলে কোয়ার্টার ফাইনালেও কিছু একটা করে ফেলবো, ইনশাল্লাহ।’
অবশ্য তার আগে একটু পরিষ্কার হতে হবে যে, কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হচ্ছে কারা।
ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলার পরই চারদিকে জোর হৈ চৈ—ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবেন মাশরাফিরা। কিন্তু হিসাব নিকাশ কি আসলেই তাই বলছে?
এখন পর্যন্ত দুই গ্রুপের যে অবস্থান, তাতে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অনেক সমীকরণ এখনও বাকি। যাতে করে বাংলাদেশের শেষ আটের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা আয়ারল্যান্ডও!
বিশ্বাস হচ্ছে না? একটু হিসাবটা পরিষ্কার করা যাক।
বাংলাদেশ এখন ‘এ’ গ্রুপের তিন নম্বর দল। ধরে নেয়া হচ্ছে যে, শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে যাবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ফলে গ্রুপের চতুর্থ দল হয়ে যাবে মাশরাফিরা। তখন নিয়ম অনুযায়ী খেলা হবে ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ভারতের সঙ্গে। কিন্তু বাংলাদেশ যদি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে যায়, তাহলেই এলোমেলো হয়ে যাবে এই হিসাব।
নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশ জিতলে এই তিন নম্বরেই থেকে যাবে তারা। এমনকি শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কা যদি আজ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যায়, তাও বাংলাদেশ হবে ‘এ’ গ্রুপের তিন নম্বর দল। তখন কিন্তু ভারতের সঙ্গে খেলা হবে না। বাংলাদেশের খেলা হবে ‘বি’ গ্রুপের দুই নম্বর দলের বিপক্ষে।
এখন কোটি টাকার প্রশ্ন হলো, ‘বি’ গ্রুপের সেই রানার্সআপ দলটি কারা?
‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ভারত; এটা নিশ্চিত হয়ে গেছে। কিন্তু দ্বিতীয় স্থানটি নিয়ে অনেক হিসাব বাকি। এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় স্থানের সবচেয়ে বড় দাবিদার দক্ষিণ আফ্রিকা। মুশকিল হলো দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের পয়েন্ট সমান—৬। এখন শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা যদি আরব আমিরাতের বিপক্ষে হেরে যায়, তাহলে কাগজে কলমে তাদের কোয়ার্টার ফাইনালের আগে ছিটকে যাওয়ারও আশঙ্কা আছে!
শেষ ম্যাচে পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ড মুখোমুখি হবে। এই ম্যাচে যারা জিতবে, তাদের সঙ্গে রানরেটে দ্বিতীয় স্থানের জন্য লড়াই হবে সম্ভবত দক্ষিণ আফ্রিকার; যদি দক্ষিণ আফ্রিকা আমিরাতের বিপক্ষে জিতে ফেলে। আর পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যে যারা হারবে, তাদের সঙ্গে টিকে থাকার লড়াই হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের; যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ ম্যাচে নিজেরাই হেরে না বসে!
এতসব সমীকরণের ফলে কিছুতেই নিশ্চিত করা সম্ভব না যে, কারা ‘বি’ গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় হবে। ফলে বাংলাদেশ যদি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেই যায়, সে ক্ষেত্রে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রতিপক্ষ আসলে যে কেউ হতে পারে।
তার আগে অবশ্য আপাতত বাংলাদেশকে নিউজিল্যান্ড ম্যাচ মাথায় নিয়ে ছুটতে হচ্ছে।
প্রথম পর্বে তিনটি ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ায় খেলার পরই শুরু হয়েছে বাংলাদেশের এই ব্যাগ কাঁধে ছোটাছুটি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ ম্যাচ খেলতে ছুটতে হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের নেলসন শহরে। আবার গত ম্যাচ খেলতে চলে আসতে হয়েছিল অ্যাডিলেডে। এখন যাচ্ছেন তারা হ্যামিলটনে। আবার কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে ফিরে আসতে হবে মেলবোর্নে।
আপাতত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের ফলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের এই ম্যাচটা অর্থহীন হয়ে গেছে। এই ম্যাচে ফলাফল যাই হোক, বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড— দু দলই খেলবে কোয়ার্টার ফাইনালে। শুধু একটা ব্যাপার হতে পারে, বাংলাদেশ যদি জয় পায়, সে ক্ষেত্রে গ্রুপের তৃতীয় দল হয়ে যেতে পারে তারা পরের রাউন্ডে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এমনিতে গত বছর কয়েকের বাংলাদেশের রেকর্ড অসাধারণ।
সর্বশেষ টানা সাত ম্যাচেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছে বাংলাদেশ; দু দুবার হোয়াইট ওয়াশ করেছে তাদের। কিন্তু সে দুবার খেলা হয়েছে বাংলাদেশে। এবার খেলাটা হবে নিউজিল্যান্ডে। আর দলটা আছেও দুর্দান্ত ফর্মে। ফলে এই দলটার বিপক্ষে জয়ের কল্পনা করা একটু কঠিন বৈকি!
তবে এসব কাগুজে হিসাব তো আর মাশরাফিদের ক্ষেত্রে খাটে না।
বাংলাদেশ এখন নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস, ইংল্যান্ডের মতো দলকে ছিটকে দেয়ার আত্মবিশ্বাস।
টাইগারদের জন্য কোটি টাকার পুরস্কার
g সোহেল সারোয়ার চঞ্চল
বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠায় ক্রিকেট দলের জন্য আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। পুরস্কারের পরিমাণ এক লাখ ডলার (প্রায় ৮০ লাখ টাকা)। এই অর্থ ক্রিকেট দলের সবাই পাবেন বলে জানা গেছে।
পাশাপাশি ক্রিকেটারদের জন্য বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ব্যক্তিগতভাবে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার এডিলেডে ম্যাচ শেষ হওয়ার পরই তিনি এ ঘোষণা দেন। এছাড়া ইংল্যান্ডকে হারানোয় ক্রীড়া মন্ত্রণালয় মাশরাফি, মুশফিক, রুবেল, সাকিবদের জন্য ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা দেয় সোমবার ম্যাচের পরই। অর্থাত্ সব মিলিয়ে মাশরাফিরা প্রায় সোয়া কোটি টাকা পুরস্কার পাচ্ছেন।
বাংলাদেশের খেলাধুলার ইতিহাসে বিসিবি থেকে এবারই প্রথম এক লাখ ডলার পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। এতো বড় অংকের অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা আগে কখনও শোনা যায়নি। বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভুঁইয়া জানিয়েছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলে এক লাখ ডলার পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্তটি আগেই নির্ধারিত ছিল। কোয়ার্টার ফাইনাল জিতলেও আমরা বড় অংকের অর্থ পুরস্কার দেবো।
প্রসঙ্গত, এর আগে জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবলে জাতীয় দলের জন্য ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন।সংগৃহীত
7:59 AM
Share: