স্পোর্টস ডেস্ক : দুর্নীতির দায়ে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ থেকে ফিফার সহ-সভাপতিসহ ৭ জনকে গ্রেফতারের ঘটনায় টালমাটাল পুরো ফুটবল বিশ্ব। যারাই প্রথম ঘটনাটি শুনেছেন, তারা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, আসলে কী ঘটে গেছে। তবে গত দুই যুগ ধরে সত্যি ফিফায় কী ঘটেছেÑ তা তদন্তে বেশ আঁট-ঘাট বেঁধেই মাঠে নামতে চাইছে ফিফা। সে জন্যই বিভিন্ন দেশের ১১ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ফিফার এথিক্স কমিটি। এই সময়ের মধ্যে জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক ফুটবল সংশ্লিষ্ট কোন কিছুতেই জড়িত হতে পারবেন না এই ১১ ব্যক্তি।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অফিস অব জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের অনুরোধে জুরিখের হোটেল থেকে ঘুম ভাঙিয়ে ৭ ফিফা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত দুই যুগ ধরে শত শত কোটি ডলার ঘুষ বাণিজ্যের সঙ্গে তারা জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুক্রবারই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে ফিফার নির্বাচন। তার আগেই ঘটল মহা কেলেঙ্কারির এই ঘটনা।দুই সহ-সভপতিসহ সাতজনকে গ্রেফতারের ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্তে নেমে পড়েছে ফিফার এথিক্স কমিটি। নির্বাচনের জন্য যে সাজ সাজ রব পড়েছিল জুরিখে ফিফার সদর দপ্তরে, সেটাকে এথিক্স কমিটি, ‘ডেমেজ পার্টি’ নামে আখ্যায়িত করেছে। একই সঙ্গে ফিফার কার্যনির্বাহী কমিটিকে পরিচ্ছন্ন করার অভিযানেরও ঘোষণা দেয় তারা।২০১৮ রাশিয়া এবং ২০২২ কাতারকে বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার মর্যাদা পাইয়ে দিতে কোটি কোটি ডলার ঘুষ বাণিজ্য হয়েছিল বলে আগে থেকেই অভিযোগ রয়েছে। এবার ৭ কর্মকর্তা গ্রেফতারের পর সেই অভিযোগ অনেকাংশেই সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।ফিফার এথিক্স কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এথিক্স কমিটির ইনভেস্টেগেটোরি চেম্বার কর্তৃক প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণাদি এবং আমেরিকান অ্যাটর্নি অফিস কর্তৃক সরবরাহকৃত তথ্যের ভিত্তিতে এথিক্স কমিটির এডজুডিকেটরি চেম্বার চেয়ারম্যান হ্যান্স জোয়াকিম একার্ট ১১ ব্যক্তিকে তাদের জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফুটবলের কোন কার্যক্রমে জড়িত হওয়ার ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল।’এছাড়া এথিক্স কমিটির ইনভেস্টেগেটোরি চেম্বারের চেয়ারম্যান ড. কর্নেল আর্টিকেল ৮৩’র অনুচ্ছেদ-১ এর ক্ষমতাবলে ওই ১১ ব্যক্তির ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্দেষ দেন। যে ১১ জনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তারা হলেন, ‘জেফ্রি ওয়েব, এডওয়ার্ডো লি, হুলিও রোকা, কস্তাস টাক্কাস, জ্যাক ওয়ার্নার, ইউজেনিও ফিগুয়েরেডো, রাফায়েল এস্কুইভেল, হোসে মারিয়া মারিন, নিকোলাস লিওজ, চাক ব্ল্যাজার এবং ড্যারিল ওয়ার্নার।’মার্কিন বিচার বিভাগে ফিফার সাবেক ও বর্তমান যে ১৪ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মধ্যে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যাক ওয়ার্নারও আছেন। ঘণ্টা কয়েক আগে তিনি নিজ দেশ ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন বলে খবরে জানা যাচ্ছে। অবশ্য পুলিশের কাছে ধরা দেয়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। ওয়ার্নার বলেন, ‘যখন আমি ফিফার দায়িত্বে ছিলাম, তখন নিজেকে কেবল খেলাধুলা সংক্রান্ত কাজেই সম্পৃক্ত রেখেছি। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার মতো কোনো কাজ আমি করিনি।’এদিকে, মার্কিন বিচার বিভাগ বলছে, গত দুই দশক ধরে ফিফায় মিলিয়ন ডলারের নিয়মতান্ত্রিক দুর্নীতি হয়েছে, যেটাকে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল রিচার্ড ওয়েবার বলছেন ‘প্রতারণার বিশ্বকাপ’।তবে দুর্নীতিবাজদের কোনো ছাড় দেবে না বলে হুঁশিয়ারিই দিয়েছেন সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার। সংস্থাটির সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্তে যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডের উদ্যোগের প্রেক্ষিতেই এমন বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। ফিফার ওয়েবসাইটে দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে এমনটিই জানিয়েছেন ব্লাটার। দুর্নীতির ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়েছেন ফিফা প্রেসিডেন্ট এভাবে, ‘যা ঘটেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও সুইস কর্তৃপক্ষের এই তৎপরতাকে স্বাগত জানাই। ফিফা এর আগেই সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ছিল। এই তদন্তের মাধ্যমে সেই কাজ করাটা আরও সহজ হবে।’কেউ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে ‘স্বাধীন নৈতিক কমিটি’র মাধ্যমে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন ফিফা সভাপতি। যেখানে ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপ ভেন্যু নির্বাচনে দুর্নীতি হয়েছে কি না তাও ওঠে আসবে। ব্লাটার বলেছেন, ‘এর আগে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার বিষয়ে যাদের নাম এসেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব পর্যায়ের ফুটবলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে যারাই নৈতিকতাবিরোধী কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।সংগৃহীত।
7:49 PM
Share: